
চিৎলা পাটবীজ খামারে গাফিলতি: বিপদে বিএডিসি ও কৃষক
মেহেরপুর, ২৯ মে ২০২৪: মেহেরপুরের চিৎলা পাটবীজ খামারে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বীজ সংরক্ষণে চরম গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। সকাল-বিকাল বৃষ্টির পানিতে ভিজে বীজের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে, যা কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এসব নিম্নমানের বীজ কৃষকদের হাতে পৌঁছালে কৃষি উৎপাদনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, খামারের খোলা মাঠে অরক্ষিত অবস্থায় ধানের বীজ পড়ে আছে, যা বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। উপযুক্ত খামার পরিচালনা ও সরঞ্জামের অভাবে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বিএডিসি কর্মকর্তা জানান, খামার পরিচালনায় সঠিক তদারকির অভাবে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বীজের গুণগত মান কমে গেলে কৃষকরা একদিকে যেমন কম ফলন পাবেন, অন্যদিকে অনেক ক্ষেত্রেই বীজ থেকে চারা উৎপন্ন হবে না। এতে কৃষকদের উৎপাদন খরচ বাড়বে, উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। বিএডিসির মতো একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বীজের ওপর কৃষকদের যে আস্থা ছিল, এই ঘটনায় সেটিও নষ্ট হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, খামার পরিচালনায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলাই এই সমস্যার মূল কারণ। যথাসময়ে বীজ মজুত না করা, পর্যাপ্ত শেড বা গুদামের অভাব, এবং বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া – এসবই বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বীজ সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত শেড ও আধুনিক গুদামঘর নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। পলিথিন কভার, টিন শেড অথবা অস্থায়ী ছাউনি ব্যবহার করে বীজকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করা যায়। এছাড়া, মৌসুম শুরুর আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া এবং খামার ব্যবস্থাপনায় দক্ষ জনবল ও নিয়মিত তদারকি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
চাষীদের ভাগ্য ভালো বীজের ওপর নির্ভরশীল। তাই রাষ্ট্রীয় খামারে এ ধরনের গাফিলতি কেবল দুঃখজনকই নয়, এটি দেশের কৃষি অর্থনীতির জন্য একটি বড় হুমকি। অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এর দায় এড়ানো কারও পক্ষে সম্ভব হবে না।