
প্রতিবেদন: সত্যের মেহেরপুর | সংশ্লিষ্ট ভিডিও— এখানে
মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের স্পষ্ট নির্দেশনার পরও শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া কার্যকর হয়নি। বরং শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা নিয়মিতভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন, কেউ কেউ লাঞ্ছিত হচ্ছেন, আবার কেউ বাস মালিক-শ্রমিকদের অপমানজনক কথাবার্তার সম্মুখীন হচ্ছেন। যার কারণে সামাজিক মাধ্যমে একের পর এক ক্ষুব্ধ স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেদের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন মেহেরপুর, গাংনী ও আশেপাশের অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা।
রাতুল নামের একজন শিক্ষার্থী ফেসবুকে মেহেরপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গ্রুপে একটি পোস্ট দেন, যেখানে তিনি অভিযোগ করেন,
“আমি সন্ধানী নার্সিং ইনস্টিটিউট গাংনী ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। মেহেরপুর থেকে গাংনী যাতায়াত করি প্রতিদিন। আমাদের হাফ ভাড়ার বিষয়টি অফিসিয়ালি জানানো হলেও বেশিরভাগ সময় বাসে ঝামেলা পোহাতে হয়। ১৩ই এপ্রিল, সকাল ৯টা ১৫ থেকে ২০ মিনিটের দিকে ওয়াপদা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে আমি বাসে উঠি। তখন পরীক্ষার দিন ছিল, প্রথম মডেল টেস্ট। টিকিট কাটার সময় আমি ১০০ টাকার নোট দিলে উনি ৭০ টাকা ফেরত দেন। তখন বললাম, হাফ ভাড়া অনুযায়ী ২০ টাকা নিচ্ছেন, কিন্তু আপনি তো ২৫ টাকা রাখলেন কেন? উনি বলেন, যা বলছি তাই নাও, অত বুঝিনি। তখন আমি বলি আপনার বাস মালিক সমিতির তালিকায় তো হাফ ভাড়া ১৫ টাকা লেখা আছে। উত্তরে উনি বলেন, তুমি কি চাকরি করো? আমি বলি না, আমি ছাত্র, আইডি কার্ড দেখাতে চাই, কিন্তু উনি তা দেখতে চাননি। উল্টো তুই তুকারি শুরু করেন এবং ক্যামেরা অন করতেই আমাকে ধাক্কা দেন।”
রাতুল আরও বলেন,
“আমাদের কমিটিতে এক বন্ধু আছেন, নাম নাসিম রানা বাধন, তাকে মেসেজ দিলে সে জানায় ডিসি অফিসে আছে, পরে কল দেবে বলে আর যোগাযোগ করেনি। এজন্য আমি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছি যাতে কেউ কিছু একটা করতে পারেন।”
‘Irfana Tasnuba Aditi’ ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“আমরা যারা কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুরে যাই তারা কি ছাত্র না? আমাদের তো দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হয়। হাফ ভাড়ার কথা বললে তারা বলে, দূরপাল্লার জন্য কিছু প্রযোজ্য না।”
‘MD Bapon’ তার অভিজ্ঞতায় জানান,
“আমরা স্টুডেন্টদের টিকিট দিলো ঠিকই, কিন্তু হাফ ভাড়া চাইতেই বলে সময় শেষ। এমনকি কয়েকজন শ্রমিক একজোট হয়ে আমাদের ঘিরে ধরে। এখন সবাই নাগরিক পার্টি!”
‘Hridoy Apon’ লিখেছেন,
“এখনো কিছু বাস মালিক ও চালকরা নিয়ম মানছেন না। তারা বলছেন, প্রশাসনের নির্দেশনা নাই। হাফ ভাড়া বললেই রেগে যায়।”
‘Ahona Akter’ বলেন,
“আমরা ইউনিফর্ম পরে, আইডি কার্ড দেখিয়ে উঠি। তারপরও হাফ ভাড়া চাইলে উল্টো আমাদেরই সন্দেহ করে। কোনো প্রমাণই যথেষ্ট না—তাহলে শিক্ষার্থী প্রমাণ করবো কিভাবে?”
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ছাত্রদের দাবিতে জেলা প্রশাসন ও বাস মালিক সমিতি হাফ ভাড়া কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কিছু মালিকপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠন এখনও সেই নির্দেশনা মানতে নারাজ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মেহেরপুর-এর পক্ষ থেকে এর আগেও তারা স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে। তাদের অভিযোগ, প্রশাসন লিখিত সিদ্ধান্ত দিলেও মাঠ পর্যায়ে তার কোনো বাস্তব প্রয়োগ নেই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ পোস্ট দিয়ে জানান,
“আমরা আগেই উদ্যোগ নিয়ে হাফ ভাড়া কার্যকর করেছিলাম। কিন্তু কিছু বাসচালক ও মালিকেরা অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা ছুটির দিনেও হাফ ভাড়া দাবি করে, এমনকি আত্মীয়দের জন্যও হাফ চায়। এছাড়া ব্যবসায়ীরাও শিক্ষার্থী সেজে হাফ চাচ্ছেন। এসব কারণে বাস শ্রমিকদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় এবং তারা সহযোগিতায় অনীহা দেখান।”
করণীয় ও সমাধান
১. বাসে স্টিকার বাধ্যতামূলক: বাসের সামনেই “শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া প্রযোজ্য” লেখা স্টিকার বাধ্যতামূলক করা হোক।
২. বাস শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ: ছাত্রদের আইডি কার্ড দেখে ভাড়া গ্রহণ এবং শিষ্টাচার শেখাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক।
৩. তদারকি টিম: জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে একটি তদারকি টিম গঠন করা হোক, যারা নিয়মিত মাঠে অভিযান চালাবে।
৪. অভিযোগ কেন্দ্র চালু: যাত্রী হয়রানির জন্য একটি হটলাইন নম্বর চালু করে তা প্রতিটি বাসে লিখে দেওয়া হোক।
৫. লিখিত চুক্তি কার্যকর: বাস মালিক সমিতির সঙ্গে সম্পূর্ণ চুক্তি অনুযায়ী আইনি পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।
৬. ঘটনার বিচার: রাতুলের ভিডিও প্রমাণসহ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।