
শব-ই-বরাত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রাতগুলোর মধ্যে একটি বলে মনে করা হলেও, এ নিয়ে নানা ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। বিশেষ করে হালুয়া-রুটি খাওয়া, আতশবাজি করা, বিশেষ মিলাদ বা নামাজ আয়োজন করা কোরআন ও সহিহ হাদিসসম্মত নয়। বরং এসব কাজ স্পষ্ট বিদআত।
শব-ই-বরাতের ভিত্তি কোরআন ও হাদিসে কতটুকু?
শব-ই-বরাত নিয়ে কোরআনে সরাসরি কোনো বক্তব্য নেই। কিছু ইসলামি ব্যাখ্যাকারকগণ সূরা আদ-দুখান এর ৩-৪ আয়াতকে এই রাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে—
“আমি এক মুবারক রাতে কুরআন নাযিল করেছি। আমি সতর্ককারী। এই রাতে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়।”(সূরা আদ-দুখান: ৩-৪)
কিন্তু অধিকাংশ তাফসিরবিদ, বিশেষ করে ইমাম ইবনে কাসির (রহ.), বলেছেন— এখানে যে “মুবারক রাত” বলা হয়েছে, তা শব-ই-বরাত নয়, বরং লাইলাতুল কদর।
শব-ই-বরাতের বিষয়ে হাদিসের অবস্থান
শব-ই-বরাতের ফজিলত নিয়ে কিছু দুর্বল (যয়িফ) ও বানানো (মওদু) হাদিস পাওয়া যায়। তবে কিছু গ্রহণযোগ্য (হাসান) হাদিস রয়েছে।
একটি হাসান হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে (১৪ তারিখের রাত) আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বনী কালব গোত্রের বকরির লোমের সংখ্যার চেয়েও বেশি মানুষকে ক্ষমা করে দেন।”(তিরমিজি: ৭৩৯, ইবনে মাজাহ: ১৩৮০ – হাসান হাদিস হিসেবে গ্রহণযোগ্য)
তবে অনেক ইসলামি স্কলার বলেন, পরবর্তী বছরের রিজিক, জীবন-মৃত্যু ও ভাগ্য নির্ধারিত হয় লাইলাতুল কদরে, শব-ই-বরাতে নয়।
শব-ই-বরাতে বিদআতি কর্মকাণ্ড
- হালুয়া-রুটি খাওয়া: শব-ই-বরাত উপলক্ষে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা কোরআন-হাদিসে নেই। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের একটি লোকজ সংস্কৃতি, যা ইসলামসম্মত নয়।
- বিশেষ নামাজ ও মিলাদ:অনেকে মনে করেন, শব-ই-বরাতে নির্দিষ্ট রাকাত নামাজ পড়তে হয়, বিশেষ দোয়া বা মিলাদ করতে হয়— যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। রাসুল (সা.) বা সাহাবায়ে কেরাম এমন কোনো আমল করেননি।
- কবর জিয়ারত:রাসুল (সা.) সবসময়ই কবর জিয়ারত করতেন, তবে শব-ই-বরাতে বিশেষভাবে কবর জিয়ারতের কোনো দলিল নেই।
- আতশবাজি ও আলোকসজ্জা:অনেকে শব-ই-বরাতকে আনন্দ-উৎসবের রাত মনে করে আতশবাজি ফোটান, যা একেবারেই ইসলামবিরোধী।
শব-ই-বরাতে কী করা উচিত?
- নফল নামাজ: যদি কেউ শব-ই-বরাতে ইবাদত করতে চায়, তবে সাধারণ নফল নামাজ পড়তে পারে।
- তওবা-ইস্তিগফার:আল্লাহর কাছে গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়া উত্তম।
- রোজা রাখা:রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতেন (বুখারি: ১৯৭০)। তবে ১৫ শাবানের বিশেষ রোজার কথা কোনো হাদিসে নেই।
শব-ই-বরাতকে কেন্দ্র করে প্রচলিত বিদআত ও ভিত্তিহীন বিশ্বাস থেকে বিরত থাকা উচিত। হালুয়া-রুটি খেতে পারেন, তবে শব-ই-বরাত উপলক্ষে নয়। বরং এই রাতকে ইবাদত, তওবা ও নফল নামাজের মাধ্যমে কাটানো উচিত।