
মেহেরপুরে ধর্ষণ মামলার আসামিদের জামিন, বাদীকে হত্যার হুমকি—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর হামলা, পুলিশের অসহযোগিতা ও বরখাস্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক: মেহেরপুরে ধর্ষণ মামলার আসামিদের জামিন, বাদীকে হত্যার হুমকি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতাকে মারধরের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সদর থানা ঘেরাও করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাতে কয়েকশো ছাত্র-ছাত্রী ও নাগরিক সমাজের নেতাকর্মীরা মেহেরপুর সদর থানার সামনে জড়ো হয়ে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন।
প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা এই কর্মসূচির মুখে পুলিশ সুপার মাকসুদা আক্তার খানম অভিযুক্ত তদন্ত কর্মকর্তা সুজেয় মল্লিককে এক ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এছাড়া, মেহেরপুর সেনাবাহিনীর মেজর ফারহানের নেতৃত্বে একটি দল থানায় উপস্থিত হয়ে ছাত্র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর বিকালে মেহেরপুরের নতুন মদনাডাঙ্গা আশ্রয়ন প্রকল্পের ৯ বছরের এক শিশুকে চকলেট দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায় একই গ্রামের বরকত আলীর ছেলে বায়োজিদ (২০)। সেখানে সে শিশুটিকে ধর্ষণ করে। এসময় তার বন্ধু আল আমিন (২০) সেই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে। পরবর্তীতে তারা ভিডিও ফাঁস করার হুমকি দিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। এরপর আরও এক লাখ টাকা দাবি জানায়। চাঁদার টাকা না পেয়ে তারা সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
এই ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে পর্নোগ্রাফি আইনে মেহেরপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুজেয় মল্লিকের সহযোগিতায় আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে বাদীকে হত্যার হুমকি দেয়। এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা তদন্ত কর্মকর্তা সুজেয় মল্লিকের কাছে কৈফিয়ত চাইলে তিনি তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ও সদস্য সচিব মোজিদুল ইসলামের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীরা থানার সামনে জড়ো হয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং আসামিদের গ্রেফতার ও তদন্ত কর্মকর্তার শাস্তির দাবিতে সদর থানা ঘেরাও করে রাখে। বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, যদি দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার ও তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে তারা আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন।
এদিকে, সাধারণ জনগণের মধ্যে এই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্তদের সহজে জামিন পাওয়া এবং বাদী পক্ষকে হুমকি দেওয়া বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থাকে নষ্ট করছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, “ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চলবে, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না!”